আবনা ডেস্ক: মহান আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ
সৃষ্টি,
সর্বশ্রেষ্ঠ
মহামানব এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা (সা.)। মহান আল্লাহ
যদি তাঁকে সৃষ্টি না করতেন তাহলে তিনি এ বিশাল সৃষ্টি জগৎ এ নিখিল
বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড কোন কিছুই সৃষ্টি করতেন না। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে:
لولاک لما خلقت الافلاک
“যদি তোমাকে সৃষ্টি না করতাম তাহলে এ নভোমণ্ডলসমূহ সৃষ্টি করতাম না”।
মহান আল্লাহর মনোনীত এ মহামানব আমাদের নবী, আমাদের পথ-প্রদর্শক। আর আমরা যে তাঁর উম্মত হতে পেরেছি এজন্য মহান আল্লাহর নিকট অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। স্মতর্ব্য যে, সকল নবী ও রাসূল মহান আল্লাহর দরবারে তাঁর উম্মত হবার সৌভাগ্য অর্জনের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। তাঁর আদর্শ শ্রেষ্ঠ আদর্শ, তাঁর সুন্নাত শ্রেষ্ঠ সুন্নাত, তাঁর ধর্ম শ্রেষ্ঠ ধর্ম। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে :
)لَقَدْ كانَ لَكُمْ في رَسولِ اللهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ(
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূল (মুহাম্মদ)-এর মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে সুন্দর আদর্শ।’’
তাঁর অনুসরণেই আমাদের মুক্তি। তাই তাঁর আদর্শ সঠিকভাবে অনুসরণ করতে হলে সর্বাগ্রে তাঁকে সঠিকভাবে জানা প্রয়োজন; তাঁর সঠিক পরিচয় আমাদের জানা থাকা উচিত। আর যারা তাঁকে চেনেন এবং জানেন তাঁদের মাধ্যমেই আমরা তাঁর সম্যক পরিচিতি লাভ করতে পারব। নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহ (যিনি তাঁর স্রষ্টা), মহানবী (সা.) স্বয়ং নিজেই এবং তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত এবং তাঁর হাতে প্রশিক্ষিত মহান আহলুল বাইতকে তিনি মুতাওয়াতির ‘হাদীসে সাকালাইন’-এ পবিত্র কোরআনের সমকক্ষ ঘোষণা করেছেন।
তাঁরাই মহানবীর পবিত্র সত্তাকে যথোপযুক্তভাবে ও পরিপূর্ণভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছেন। তাই মহানবী (সা.) সম্পর্কে তাঁদের বক্তব্য আমাদের কাছে মহানবীর অত্যুজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব ও বৈশিষ্ট্যাবলী নির্ভুলভাবে তুলে ধরতে সক্ষম হবে। পবিত্র কোরআন, মহানবীর পবিত্র হাদীস, আহলুল বাইতের বক্তব্য বিশেষ করে হযরত আলীর নাহজুল বালাগাহর বিভিন্ন ভাষণ ও খুতবায় মহানবীর প্রকৃত পরিচয়, মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য এবং তাঁর নবুওয়াত ও রিসালতের প্রকৃত রূপ, তাঁর নেতৃত্ব ও হেদায়েত এবং সুন্নাহর গুরুত্ব অত্যন্ত নির্ভুলভাবে তুলে ধরা হয়েছে। কারণ হযরত আলী (আ.) ছিলেন শৈশব থেকে মহানবীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে লালিত-পালিত। মক্কার তীব্র অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিলে আবু তালিবের সন্তানদের মধ্যে থেকে মহানবী হযরত আলীর দায়িত্বভার নিয়েছিলেন যেহেতু আবু তালিবের পরিবার ছিল অনেক বড়। আর আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব হযরত জাফর ইবনে আবু তালিবের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। এ সময় মহানবী (সা.) বলেছিলেন,
و قد اخترت من اختاره الله لی علیکم علیا
“আমি তাকেই গ্রহণ করেছি যাকে মহান আল্লাহ আমার জন্য তোমাদের উপর উচ্চ মর্যাদা ও সম্মান সহকারে গ্রহণ ও মনোনীত করেছেন।১
এভাবে হযরত আলী (আ.) একেবারে শৈশব থেকেই মহানবীর তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত ও বড় হতে থাকেন। মহানবীকে মহান আল্লাহ পাক যেভাবে শিক্ষা দিয়েছেন ঠিক সেভাবেই তিনি হযরত আলীকেও প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলেন। আর ঐ দিন থেকে হযরত আলী মহানবীর ওফাত পর্যন্ত কখনোই বিচ্ছিন্ন হন নি। প্রচলিত নিয়মানুযায়ী হযরত আলী পিতার তত্ত্বাবধানে পুত্র বা বড় ভাইয়ের তত্ত্বাবধানে যেমন ছোট ভাই প্রতিপালিত হয় ঠিক সেরকমভাবে প্রতিপালিত হন নি। এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়টি উল্লেখ করাই যথেষ্ট যে, হযরত আলী মহানবীকে এমন কি হেরা পর্বতের গুহায় নির্জনবাসের সময়ও সঙ্গ দিয়েছিলেন। আর এ কারণেই নবুওয়াতের ঘোষণার পূর্বেই মহানবীর যেসব আত্মিক ও চিন্তাগত বিবর্তন হচ্ছিল তা তিনি প্রত্যক্ষ করেছিলেন। হযরত আলী তাঁর জীবনে এ সকল উজ্জ্বল চিরঞ্জীব দিনগুলো এবং অতি সংবেদনশীল পর্যায়ের কথা এভাবে ব্যক্ত করেছেন :
‘‘আর তোমরা সবাই মহানবীর কাছে আমার নিকটাত্মীয়তা ও বিশেষ মর্যাদাগত অবস্থান সম্পর্কে অবগত আছ। তিনি আমাকে তাঁর কোলে রাখতেন যখন আমি শিশু ছিলাম। তিনি আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরতেন এবং তাঁর বিছানায় শুইয়ে রাখতেন। তাঁর পবিত্র দেহ আমার দেহকে স্পর্শ করত এবং তিনি আমাকে তাঁর শরীরের সুগন্ধির ঘ্রাণ নেওয়াতেন। তিনি খাদ্য-দ্রব্য চিবিয়ে আমার মুখে পুরে দিতেন। তিনি আমাকে কখনো মিথ্যা বলতে এবং পাপ করতে দেখেন নি। তিনি প্রতি বছর হেরাগুহায় একান্ত নির্জনে বাস করতেন। আমি তাঁকে দেখতাম। আমি ব্যতীত আর কোন লোকই তাঁকে দেখতে পেত না। ঐ সময় রাসূলুল্লাহ ও খাদীজাহ্ ব্যতীত কোন মুসলিম পরিবারই পৃথিবীর বুকে ছিল না। আমি ছিলাম তাঁদের পরিবারের তৃতীয় সদস্য। আমি ওহী ও রেসালতের আলো প্রত্যক্ষ করেছি এবং নবুওয়াতের সুবাস ও সুঘ্রাণ অনুভব করেছি।’’২
এ বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয় যে, মহানবী (সঃ)-এর সাথে হযরত আলী (আ.)-এর অতি নিবিড় ও আধ্যাত্মিক সম্পর্ক ছিল যা অন্য কোন সাহাবীর সাথে মহানবীর ছিল না। আর এটি হলো মারেফাত অর্থাৎ অধ্যাত্ম জ্ঞানের সর্বোচ্চ পর্যায়। এ কারণেই শৈশব থেকেই হযরত আলী হাকীকতে মুহাম্মদীর সাথে সম্যকভাবে পরিচিত ছিলেন। তাই মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পরই হযরত আলীই সর্বাধিক অগ্রগণ্য ব্যক্তি যিনি মহানবী সম্পর্কে সঠিক তথ্য ও পরিচিতি প্রদান করতে সক্ষম। তাই আমরা হযরত আলীর ভাষণ, অমিয় বাণী ও (প্রেরিত) পত্রাদির সংকলন নাহজুল বালাগাহর বিভিন্ন ভাষণ, অমিয়বাণী ও চিঠি-পত্রে হযরত আলী মহানবী সম্পর্কে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন তা এখানে উদ্ধৃত করব। আশা করা যায় যে, আমরা এ থেকে মহানবী (সা.)-এর অতুলনীয় বিশাল ব্যক্তিত্বের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জ্ঞাত হতে পারব।
মূল আরবী থেকে মোঃ মুনীর হোসেন খান কর্তৃক অনূদিত
(চলবে...)